বাংলাদেশ পুলিশ : একটা তাজা স্বপ্ন খুনের ইতিবৃত্ত!
ইতি,
বাংলাদেশ পুলিশ।
স্বাধীন বাংলাদেশের কথা শুনেছিলাম, আজ যখন সারদা থেকে বের হয়ে পা রাখলাম এই স্বাধীন দেশে তার আগেই আমি জেনে গেছি যে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ থেকে। চমৎকার একটা মানসিকতা নিয়ে পুলিশে যোগদান করি, ভেবেছিলাম আমার ব্যক্তিগত আচরণ হবে সাম্যের, আমার আচরণে কোন দল, ধর্ম আর মতের মানুষের প্রাধান্য থাকবে না, একজন মানুষ সে মানুষ হিসাবে আমার কাছ থেকে তার প্রাপ্য আচরণটাই পাবে।
একটা চাকুরী পাওয়ার জন্য কী করা লাগে আমাকে একটু বলবেন?পুরো একটা বছর ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রত্যেকটি ধাপ ছিল নক আউট অর্থাৎ কেউ প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং, ফিল্ডের ৭টা ধাপ, ৫টি বিষয়ে লিখিত, কম্পিউটার ( এম এস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন), ভাইবা, মেডিকেল এবং চুড়ান্ত ভেরিফিকেশনের যেকোনো পর্যায়ে বাদ পড়ে গেলে তার কোন সুযোগ ছিল না পরবর্তী ধাপে যাওয়ার।
এতগুলো ধাপ পার হয়েও শুনলাম আমার চাকুরী হয়নি, শুরু হয়নি আমার বেতন রেশন। আমাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে ১ বছর মৌলিক প্রশিক্ষণের। সেখানে এই কঠিন প্রশিক্ষণ পাড়ি দিতে গিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে আমার অনেক ব্যাচমেট চাকুরী ছেড়ে চলে যায়। অপরদিকে সকল কষ্টকে দাঁত কামড়ে পড়েছিলাম মাঠে, ভাবতাম একদিন এই কষ্টের শেষ হবে, শুধু সুস্থ থাকতে পারলেই হল। মাঠে ফজরের আযানের আগ থেকে শুরু হত দৌড় সেকি কষ্ট, কখনো তাপমাত্রা ৮/১০° সে. এর কনকনে শীত আবার কখনো ৪২/৪৫ সে. এর তীব্র তাপদাহ। এভাবেই শেষ করেছি গত এক বৎসর।
কপাল কি জিনিস জানেন? কতটা পথ পাড়ি দিলে একটা চাকুরী পাওয়া যায় বলতে পারবেন? আমি সারদার মাঠে কম করে হলেও ৩০০০ কিমি দৌড়েছি, তবুও আমি চাকুরীটা পাইনি।
আজ বিদায় বেলা বাংলাদেশ পুলিশ আমার সাথে তার সকল হিসেবে চুকিয়ে নিয়েছে, আমাকে বাহ্যিক যা যা দিয়েছে তার সবটাই সে বুঝে নিয়েছে কিন্তু আমাকে বুঝিয়ে দেয় নি আমার এক এক করে গোনা ৩৬৬ দিন, বুঝিয়ে দেয় নি বিনা পারিশ্রমিকে সারদার মাঠে টপটপ করে ঝড়ে পড়া শত সহস্র ফোটা ঘাম, চোখের পানি আর ক্ষেত্রবিশেষে শরীর থেকে ঝড়ে পড়া রক্তের দাম।
আমি দুর্বল, আমি মাজলুম, আমি জানিনা আমার কোথায় যাওয়া উচিত? কার কাছে গেলে আমি বিচার পাব? কে করবে আমার বিচার? কে বুঝিয়ে দিবে আমার না পাওয়া হিসেবগুলো?
তবে আশা রাখি, আল্লাহ যদি সহায় হোন একদিন এই পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, এই রাষ্ট্র, আমার সকল ক্ষতিপূরণ নিয়েই আমাকে ডাকবে, সেদিন আমি সিদ্ধান্ত নিব যে আমি চাকুরীতে ফিরবো কি ফিরবো না!
কিন্তু সাময়িক যে কষ্টটা আমি পেয়েছি আমি জানিনা তার মানসিক চাপটা কিভাবে সামলে উঠবো, কিভাবে আবার অগোছালো শূন্য জীবনটাকে গড়ে তুলবো! কিভাবে, কি শুরু করব এর কোনকিছুই না জেনে বাড়ির পথে পা বাড়াচ্ছি। অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের দিকে আমাকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।।
আপনারা হয়ত ভেবেছেন ঠিক করেছেন আমি শুধু চাই এমন অনেক গুলো ঠিক যেন আপনাদের সাথেও হয়!
সারদার ১১২ বছরেরে ইতিহাসে এমন কোনদিন আসেনি, ট্রেনিং সম্পন্ন করা এত ট্রেইনিস কে কোনদিন সারদা থেকে বিদায় করা হয়নি। আপনারা করলেন, আমরা মেনে নিলাম, মন না চাইলেও মানতে হবে কারন আপনারা ক্ষমতাশালী আর আমরা চাকুরী প্রত্যাশী সাধারণ নাগরিক। আপনাদের ক্ষমতা, আপনাদের রাজত্ব হয়ত চিরকল থাকবে না, তবে থেকে যাবে আমাদের আত্মচিৎকার, মায়ের কান্না আর আমাদের অসহায় মুখগুলো। রুহের হায় বলে একটা কথা আছে শুনেছি আল্লাহ তা কখনোই বরদাস্ত করেন না।
উপরের লেখাগুলো আমার কষ্টের বহিঃপ্রকাশ, অস্বীকার করার উাপায় নেই যে কঠোর পরিশ্রমের পরে ফলাফল হিসেবে পাওয়া এই শূন্যতা আমাকে সারাজীবন হয়ত অবচেতন মনে স্মৃতিকাতর করে তুলবে। তবে আমি হাতশ কিংবা আফসোস করার মত লোক হতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ অবশ্যই আমাকে এর থেকেও ভালো প্রতিদান দিবেন। আমার রিজিক হয়ত পুলিশে এতটুকুই ছিল। আমার শুভাকাঙ্ক্ষী যারা আমাকে একটু ভালো অবস্থানে দেখতে চেয়েছিলেন তাদের কাছে আমি আন্তরিকতভাবে দুঃখিত তবে আল্লাহ চাইলে আমি আবার ঘুরে দাঁড়াব ইনশাআল্লাহ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। ভালো থাকুক প্রিয় স্বদেশ, ভালো থাকুক বাংলাদেশ পুলিশ।
সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ।
পরিশেষে বলতে চাই,
যতবারই হত্যা করো, জন্মাবো আবার।
দারুণ সূর্য হবো, লিখবো নতুন ইতিহাস।
বিদায় বন্ধু সারদা, জীবনে অনেক কিছুই
হয়তো ভুলে যাব, তোমায় কিন্তু ভুলব না!
আগমনী ০৪/১১/২০২৩ ইং, সকাল ০৭ ঘটিকা।
সমাপ্তি ০৪/১১/ ২০২৪ ইং, দুপুর ১২ ঘটিকা।
গল্পের পূর্ণতা পাওয়ার দিনে শূন্যতার ব্যবচ্ছেদ। যোগদান পত্রের বদলে অব্যাহতি পত্র!